শরীরের চর্বি কমানোর উপায় - এবং কার্যকর পদ্ধতি
শরীরের চর্বি কমানোর উপায়, বর্তমানে আমাদের শরীরকে ঠিক রাখার জন্য শরীরের ওজন বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। শরীরের ওজন বেশি থাকায় বিভিন্ন ধরনের জটিল সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
বিভিন্ন কারণ থেকে শরীরে চর্বি জমে বা খাবারের মাধ্যমেও চর্বি জমে। তাই আসুন আমরা এই আর্টিকেল থেকে শরীরের চর্বি কমানোর উপায় এবং কার্যকর পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
পোস্ট সূচিপত্রঃ শরীরে চর্বি কমানোর উপায়
- শরীরের চর্বি কমানোর উপায়
- শরীরের চর্বি বলতে কি বোঝায়
- শরীরের চর্বি জমার কারণ
- শরীরের চর্বি জমার লক্ষণ
- শরীরে চর্বি কমানোর সহজ ও কার্যকারী উপায়
- লেখকের মন্তবঃশরিরের চর্বি কমানোর উপায়
শরীরে চর্বি কমানোর উপায়
শরীরের চর্বি কমানোর উপায় এবং কার্যকর পদ্ধতি গুলো আমরা সবাই অনুসরণ করতে
চায়। প্রায় সবার ক্ষেত্রে শরীরকে শারীরিক ও মানসিক সব দিক দিয়েই
বজায় রাখা একটি কঠিন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন কারণবশত এই সমস্যাটা
হয়ে থাকে। আমরা যদি সেই দিকগুলো চিহ্নিত করে নিতে পারি তাহলে শরীরকে ঠিক
রাখা সম্ভব হবে।
আর শরীরে চর্বি জমে যায় তাহলে সেগুলো কিভাবে দ্রুত অতিক্রম করা যায় তা
সম্পর্কে জেনে আমাদের সেই কাজগুলো করতে হবে। তাহলে শরীরের ওজন এবং চর্বি কমাতে
সক্ষম হতে পারবো। আসুন এ আর্টিকেল থেকে শরীরের চর্বি কমানোর উপায়
সম্পর্কে বিস্তারিত জানা জানা যাক।
শরীরে চর্বি বলতে কি বোঝায়
মানুষের শরীরের চর্বি বলতে আমরা সাধারণত দুই প্রকার জানি। এক আমরা জানি,
শরীরের ত্বকের নিচে চর্বি, সাধারণত এই চর্বিগুলো কোন ক্ষতিকারক না। এটি ত্বককে
সুরক্ষিত ও উজ্জ্বল করে রাখে। যা শরীরের কোন ক্ষতি করে না। আর অন্যটি হলো,
ভিশারাল ফ্যাট যা শরীরের ভেতরে অর্থাৎ পেটের ভেতরের অঙ্গ গুলিকে ঘিরে
রাখে।
বিশেষ করে পেটের লিভারে এবং অগ্ন্যাশয় এর মত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিকে ঘিরে
নেয়। আর এই ভিসারাল ফ্যাট এর কারণে বিভিন্ন ধরনের জটিল সমস্যা গুলো
হয়ে থাকে। যেমন; ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, হাই প্রেসার, উক্ত রক্তচাপ এবং
ক্যান্সারের মতো জটিল সমস্যাগুলো হয়ে থাকে। তাই শরীরে চর্বি জমানো
বিষয়টি অবহেলিত না করে সঠিক চিকিৎসা বা উপায় জেনে এর প্রতিকার করতে হবে। আসুন
নিচে শরীরে চর্বি কমানোর উপায় গুলো বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
শরীরে চর্বি জমার কারণ
মানুষের শরীরে বিভিন্ন কারণ থেকে চর্বি বাড়তে থাকে। আমাদের দৈনন্দিন
জীবনের চলাফেরা কাজকর্মের মাধ্যমেও চর্বি জমে। যেমন সারাদিন বসে কাজ
করা, হাটা চলা কমে যাওয়া, কোন পরিশ্রম কাজ না করার মাধ্যমেও শরীরে চর্বি
জমে। আবার খাবার যেমন; অতিরিক্ত ভাত, মিষ্টি, অতিরিক্ত তৈল জাতীয় জিনিস
খাওয়া, চিনি, ড্রিংকস, এবং চায়ে অতিরিক্ত চিনি পান করার মাধ্যমেও
শরীরে চর্বি জমে।
বিশেষ করে বেশি রাতে বেশি পরিমাণ ভাত বা ভার জাতীয় জিনিস গ্রহণ করলে শরীরে
তাড়াতাড়ি চর্বি জমতে সাহায্য করে।এবং মানসিক চাপ, বা মানসিক অশান্তি মাধ্যমে
শরীরে চর্বি জমে। আবার পানি কম খাওয়ার কারণ থেকেও হয়ে থাকে।
শরীরে চর্বি জমার লক্ষণ
শরীরে চর্বি জমার লক্ষণ, আমরা সাধারণত অনেকভাবেই উপলব্ধি করতে পারি। বিভিন্ন
শারীরিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এর লক্ষণ উপলব্ধি করা যায়। এই লক্ষণগুলো সাধারণত
অনেক জনের ক্ষেত্রে একক ধরনের হয়ে থাকে। যেমন কিছুটা, আগের তুলনায়
পেটের নিচে নাভীর সাইটগুলো মোটা হতে থাকে, এবং আগের তুলনায় শরীরের ওজন
বৃদ্ধি পাওয়া।
বিশেষ করে পেটের নিচে এবং নাভির সাইটগুলো ফুলে যাওয়া, ঘাড়ের গদনে
বেশি মাংস জমে যাওয়া, এবং অল্পতেই শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়া। পেশার বেড়ে যাওয়া,
অল্পতেই শরীরে অনেক ঘাম হওয়া ইত্যাদি থেকে। এই কারণগুলোই সাধারণত পেটে
অথবা শরীরে চর্বি জমার লক্ষণ দেখা দেয়।
শরীরে চর্বি কমানোর সহজ ও কার্যকারী উপায়
শরীরের চর্বি কমানো উপায়, আমরা সঠিক নিয়মে জীবনধারা ও চলাফেরা করে এর
প্রতিকার করতে পারি। আমরা যদি নিচের দেওয়া নিয়মগুলো অনুসরণ করতে পারি। তাহলে
শরীরের চর্বি কমতে সহজ হতে পারে।একটু কষ্ট হলেও অল্প দিনের মধ্যেই কমে যাই। আসুন
আমরা শরীরের চর্বি কমানোর উপায়, এবং কার্যকরী পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত
জেনে নেওয়া নিইঃ
প্রথমে আমাদের খাবার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে
শরীরের চর্বি কমানোর উপায় এবং কার্যকর পদ্ধতি, গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
বিষয় হল খাবার নিয়ন্ত্রণ। আমাদের খাবারের প্রতি সচেতন হতে হবে। যেসব খাবার
শরীরের চর্বি জমাতে সহায়তা করে, যেমন; ফাস্টফুড, চিনি জাতীয় খাবার, অধিক
তৈল জাতীয় খাবার ভাজাপোড়া, এবং চর্বিযুক্ত খাবার এগুলোকে বয়কট করতে হবে। এবং
আমাদের যেসব খাবারে চর্বি কমাতে সাহায্য করে সেসব খাবার খেতে হবে।
আমরা যদি কিছুটা নিয়ম মেনে খাবার এবং সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। তাহলে ২থেকে
৩ মাসের মধ্যেই পেটের চর্বি ও ওজন কমাতে সক্ষম হব। আমাদের কিছু নিয়ম মেনে
খাবার খেতে হবে, যেমন;
- প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ব্লাক কফি দুই চামচ, Extra VirginCoconut Oil এক চামচ, ঘি এক চামচ এবং পিংস সল্ট এক চিমটি দিয়ে তৈরি করে খেতে হবে।
-
আবার কিছুক্ষণ পর, কাঁচা বাদাম ৫-৭টি হাফ চামচ ঘিয়ে ভেজে তেলসহ খাবেন।
এবং হালকা গরম পানিতে ১-২টি লেবুর রস মিশিয়ে পান করবেন।
-
এরপর বিকাল বেলা পাঙ্গাস মাছ ১ পিস ঘি দিয়ে ভেজে খেতে হবে। পাঙ্গাস মাছের পরিবর্তে অন্য মাছ ও খেতে পারেন
১ পিস। যেহেতু পাঙ্গাস মাছ এর তেল শরীরের চর্বি কমাতে সহায়তা করে তাই
পাঙ্গাস মাছ খাওয়ায় বেশি উপকার হবে। এরপর আবার ৫-৭টি কাঁচা বাদাম ঘি দিয়ে ভেঁজে খেতে
হবে, এবং এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে ১-২টি লেবুর রস মিশিয়ে খাবেন। এবং
কাঁচা পেঁপে, কেটে ২ টি পিস করে নিয়ে খাবেন। এবং সারাদিনে ভার জাতীয় খাবার খাওয়া নিষেধ। আর আপনার যদি ভাত না খেয়ে খারাপ লাগে তবে দুপুরে একটি
ছোট পাত্রে সামান্য পরিমাণ ভাত খেতে পারেন। তবে ভাত বা ভার জাতীয় কিছু না
খাওয়াই আপনার শরীরের চর্বি কমানোর জন্য সহজ হবে। একই নিয়মে দুই সপ্তাহ
মতো খেতে হবে।
- আবার পরের সপ্তাহ থেকে, প্রতিদিন সকালে গরম পানির সাথে পিংক সল্ট, ব্ল্যাক কফি ২ চামচ,Extra Virgin Coconut Oil এক চামচ, এবং ঘি মিশিয়ে খেতে হবে। এবং আপনি প্রতিদিন শাক জাতীয় যেমন পুঁইশাক পিংক সল্ট, এবং ঘী, সরিষার তেলে দুই তিনটা রসুন কোয়া দিয়ে ভেজে প্রতিদিন এক বাটি করে খেতে পারেন। পাঙ্গাস মাছ এক পিস ঘি দিয়ে ভাজা।এবং পাঙ্গাস মাছ ভাজা ছাড়াই ঘি এক্সট্রা বিগেন কোকোনাট অয়েল দিয়ে, অল্প পেঁয়াজ কুচি, এক দুইটা কাঁচা মরিচ, এবং সামান্য একটু মসলা দিয়ে রান্না করে খেতে পারেন এখানে অবশ্যই পিংক সল্ট দিয়ে রান্না করতে হবে।
- ডিম পোচ ঘি দিয়ে ভাজা একটি করেও খেতে পারেন। এবং সারাদিনে দুই থেকে তিনবার গ্রিন টি খাবেন। গ্রিন টি পেটের চর্বি কমায়, এবং শসা তিন থেকে চারটি করে প্রতিদিন খাবেন। এগুলো শুধু দিনের মধ্যে খাবেন, সবগুলোই একসাথে খাবেন না। সময় ভাগ ভাগ করে নিবেন, সকাল ৮ টা, সকাল ১১ ট, দুপুর ১টা, বিকাল ৫টা, সন্ধ্যা ৭ টা এভাবে রুটিন মেনে খাবার খেলে শরীরের চর্বি কমানো সহজ হবে। আর সারাদিনে ৩ থেকে ৪ লিটার পানি খেতে হবে ১২ থেকে ১৬ গ্লাস। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। তাহলে সহজে শরীরের চর্বি কমানো যাবে।
দ্বিতীয়তঃ নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে চর্বি কমানো যাই
শুধু খাবার নিয়ন্ত্রণ করলে হবে না তার সাথে ব্যায়ামও প্রয়োজন। শরীরে চর্বি
কমানোর উপায় এবং কার্যকর পদ্ধতির গুলোর মধ্যে ব্যায়াম এর অবদান অনেক।
আপনি যদি নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাহলে আপনার শরীর থেকে অনেক ঘামের মাধ্যমে
চর্বি গলে বাইরে বেরিয়ে আসবে।
- প্রতিদিন ৪০ থেকে ৬০ মিনিট হাঁটতে হবে। এমন ভাবে হাঁটতে হবে যাতে শরীর থেকে ঘাম বের হয়। এবং বিভিন্ন কাজের এর মধ্যেও ব্যায়াম করতে হবে। বাসায় দড়ি খেলার মাধ্যমে ঘাম বের করতে হবে। এক কথায় যেসব খেলা বা ব্যায়াম করে শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হয় সেসব ব্যায়াম করতে হবে। আবার সাঁতার এর মাধ্যমেও ব্যায়াম করা যায়।
তৃতীয়ত পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের চর্বি কমায়
মানুষের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন অনেক।
- একজন স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে একটু বেশি ৮ থেকে ১০ ঘন্টা। শরীরের চর্বি কমানোর উপায় এবং কার্যকর পদ্ধতি যদি অনুসরণ করি তাহলে ঘুম ও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অল্প ঘুমানোর মাধ্যমেও শরীরের চর্বি বাড়ে। তাই আপনাকে রাত ১০টার পর ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে। এবং ৬ থেকে ৭ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। তাহলে শরীরের চর্বি বা ওজন কমতে সাহায্য হবে।
এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে
শরীরে চর্বি কমানোর উপায় এবং কার্যকর পদ্ধতি গুলোর মধ্যে মানসিক চাপ
নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শরীরে মানসিক চাপ এর ফলে ভিশারাল ফ্যাট জমে। আপনাকে সব
সময় মানসিক চাপ মুক্ত এবং ধৈর্যশীল বজায় রাখতে হবে। খাবার, ব্যায়াম ঘুম সব
দিকনির্দেশনার ওপর ধৈর্যশীল হতে হবে তাহলে সহজে শরীরের চর্বি কমাতে
সক্ষম হবেন।
লেখকের মন্তব্যঃ শরীরে চর্বি কমানোর উপায় এবং কার্যকর পদ্ধতি
এখন বর্তমান বিশ্বে অনেক ধরনের ব্যাক্তিরায় শরীরের চর্বি কমানোর উপায়
সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান। আবার অনেকেই ভয় করেন যে শরীরের চর্বি কমানো
যায় কিনা। আপনি যদি উপরের দেওয়া দিকনির্দেশনা গুলো উপসরন করেন তাহলে তিন
মাসের মধ্যেই আপনার ওজন এবং পেটের চর্বি নিমিষেই উধাও হয়ে যাবে। এরপর
আপনি সাধারণভাবে আবার জীবন যাপন করতে পারবেন। কিন্তু শরীরকে ঠিক ও সুস্থ
রাখার জন্য যেসব খাবার শরীরের অস্বাস্থ্যকর এবং চর্বি জমায় সেসব কারণগুলো থেকে
দূরে থাকবেন।
আপনি যদি কোন বিষয় বুঝতে না পারেন তাহলে আমার যোগাযোগ পেজে বা নাম্বারে কল বা
মেসেজ করতে পারেন। এবং এ আর্টিকেলটি থেকে আপনি যদি উপকারিতা হন তাহলে একটি
কমেন্ট করে যাবেন। এবং বন্ধুদের কাছে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।



অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url